তারকা জুটি মেহজাবীন- আদনানের ভালোবাসায় কোন লুকোছাপা ছিলনা। ঢাকঢোল পিটিয়ে ঘোষণা না দিলেও তাদের প্রেমে সত্যতা ও গভীরতা ছিল। তাই ১৩ বছরের প্রেম পূর্ণতা পেল পরিণয়ে।
দেশের শোবিজ অঙ্গনের মেধাবী ও দর্শকনন্দিত অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী। ২০০৯ সালে একটি রিয়েলিটি শোয়ের মাধ্যমে বিনোদন জগতে পা রাখেন এই অভিনেত্রী এবং এরপর থেকে ছোট পর্দার নাটকে অভিনয় করছেন দীর্ঘদিন। বর্তমানে নাটকের পাশাপাশি ওয়েব সিরিজেও কাজ করছেন নিয়মিত।
ছোটপর্দা ও ওটিটি মিলিয়ে অভিনয় ক্যারিয়ারের এক যুগেরও বেশি সময় পার করে দিয়েছেন মেহজাবীন এবং তার অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ করেছেন দেশের আপামর দর্শককে। একযুগের এই সফল যাত্রা শেষে বর্তমানে চলচ্চিত্রে শুরু হয়েছে অভিনেত্রীর সফল পদচারণা এবং শঙ্খ দাশগুপ্ত পরিচালিত "প্রিয় মালতী" দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক হয়েছে মেহজাবীন চৌধুরীর। মুক্তির তালিকায় রয়েছে মাকসুদ হোসেন পরিচালিত 'সাবা'।
সময়ের এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী কর্মজীবনে যেমন তার কাজ প্রসঙ্গে কখনও অতিরিক্ত বাগাড়ম্বর না করে নিষ্ঠা ও একাগ্রতা নিয়ে একমনে কাজ করে গিয়েছেন ও প্রশংসিত হয়েছেন, তেমনি ব্যক্তিজীবনেও ভালোবাসা সম্পর্ক নিয়ে কখনও ঢাকঢোল পেটান নাই। তাই বলে তারা নিজেদের প্রেমকে কখনও লুকিয়ে রাখেননি এবং নির্মাতা আদনান আল রাজীব ও অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী ভালোবাসার সম্পর্কের কথা শোবিজাঙ্গনে কারো অজানা নয়। দীর্ঘদিন ধরেই প্রেম করার পর অবশেষে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন এই জুটি।
প্রেম ও বিয়ে নিয়ে শুরু থেকেই নিশ্চুপ ছিলেন ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী।তার ভালোবাসার মানুষ নির্মাতা আদনান আল রাজীবও তাই। তারা কেউই এ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক কোন ঘোষণা দেন নাই। আর সেকারণেই তাদের ভক্তদের সেই কাঙ্খিত শুভক্ষণের অপেক্ষা ছিল এবং বিয়ের তারিখ জানার পরে আনন্দের পাশাপাশি প্রিয় অভিনেত্রীর কাছ থেকে সুসংবাদ শোনার অপেক্ষায় ছিলেন তারা।
অবশেষে সকলের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে নিজেদের বিবাহোত্তর সংবর্ধনার ছবি পোস্ট করে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথমবার সম্পর্ক, প্রেম এবং পূর্ণতার গল্প অনুরাগীদের সাথে ভাগাভাগি করেন ছোটপর্দার তারকা অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী। একরাশ উচ্ছ্বাস নিয়ে তিনি জানান, তাদের ১৩ বছরের প্রেম সুন্দর ও শুভ পরিণতি পেয়েছে ভালোবাসা ও ফাগুনের দিনে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে মেহজাবীন ও রাজীবের চার হাত এক হয়। বিয়ের সেই আমন্ত্রণপত্রে ইংরেজিতে লেখা ছিল- ‘মহিউদ্দিন চৌধুরী ও গাজালা চৌধুরীর আদরের কন্যা মেহজাবীন চৌধুরীর সঙ্গে বাসেদুল আলম ও সাবেকুন নাহারের ছেলে আদনান আল রাজীবের বিয়েতে আপনি সাদরে আমন্ত্রিত।’
মেহজাবীনের নিজ কথনে তাদের প্রেমের পূর্ণতার গল্প প্রকাশিত হতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেটিজেনদের খুশির প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠে। সোমবার সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) তাদের বিবাহোত্তর সংবর্ধনার দিনে দীর্ঘ তের বছরের নীরবতা ভেঙে মেহজাবীন তাদের প্রেমের গল্পে বলেন।ফেসবুকে বিয়ের কয়েকটি ছবি শেয়ার করেন ক্যাপশনে অভিনেত্রী লিখেন, ‘ভাঙা দাঁত ও সুন্দর হাসিমাখা একটি ছেলে আমার সাথে দেখা করতে আসে। আমি তখন শুটিং হাউসের ছাদে দাঁড়ানো। রাস্তা থেকে আমার দিকে হাত নাড়াচ্ছিল। আমরা ১৫ মিনিটের মতো কথা বলি, হাত মেলাই, এরপর সে চলে যায়। তখনই মনে হচ্ছে আমার হৃদয়ের কোনো টুকরো তার সাথে চলে গেছে। আমি বুঝে যাই-সত্যিই প্রেমে পড়েছে আমি।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘সেই ঘটনার ১৩ বছর পেরিয়ে গেছে। আমরা এখনো আছি। নিজেদের সাফল্য ও ব্যর্থতা একসঙ্গে ভাগাভাগি করছি। বলা হয়ে থাকে যে সাত বছরের বন্ধুত্ব নাকি আজীবন টিকে যায়। আমরা প্রায় দ্বিগুণ করে ফেলেছি। ২০২৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আমরা সেই বন্ধনকে সিলবদ্ধ করেছি। সারাজীবন হাতে হাত ধরে চলার শপথ নিয়েছি। আদনান আল রাজীব, আমি তোমাকে আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছি।’
সবশেষে সবার কাছে দোয়া চেয়ে এই অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘আমাদের নতুন এই যাত্রায় আপনাদের সবার ভালোবাসা ও প্রার্থনা চাই যেন সামনের দিনগুলো আমরা একসঙ্গে সুখে কাটাতে পারি।’
আরও পড়ুনঃ- 'টগর’ সিনেমায় দীঘির জায়গা নিলেন পূজা
এরপর থেকেই সমাজমাধ্যমে এই তারকা জুটি ভক্ত, সহকর্মী, সহশিল্পী, অনুরাগী, অনুসারী ও শুভানুধ্যায়ীদের শুভেচ্ছা এবং শুভকামনার বন্যায় ভেসেছেন এবং বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আনন্দঘন মুহূর্তের ভিডিও ক্লিপ ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে নেটদুনিয়ায়।এরমধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হয়েছে বিয়ের মঞ্চে বর রাজীবকে জড়িয়ে ধরে মেহজাবীনের কান্নার ছবিটি। পূর্ণতার উচ্ছ্বাসে তাদের এই আনন্দাশ্রু সকলের মন ছুঁয়ে গিয়েছে এবং আবেগাপ্লুত ভক্তদের কাছে এদিনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত এটাকেই মনে হয়েছে।
গতকাল ২৪ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) ঢাকার অদূরের মধুমিতা মডেল টাউন সংলগ্ন এক রিসোর্টে বসেছিল মেহজাবীন- রাজীবের বিয়ের আসর। বিয়ের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি থেকে শুরু করে মেহজাবীনের বোন ও স্বয়ং মেহজাবীনকেও নাচতে দেখা যায়।পরিবারের লোকজন, আত্মীয় স্বজন ছাড়াও বিয়েতে বিনোদন অঙ্গনের মধ্যে আমন্ত্রিত ছিলেন নির্মাতা রেদওয়ান রনি, অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা, সিয়াম আহমেদ, সাবিলা নূর, এলিটা করিম, আশফাক নিপুণ, সাদিয়া আয়মান, রায়হান রাফী, তমা মির্জা, নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুল, মোস্তফা কামাল রাজ, জেফার রহমানসহ অনেকে এবং আমন্ত্রিত সকলের মাঝেও এই তারকা জুটির খুশির ছোঁয়া লেগেছিল।
বিয়েতে শুভ্র সাজে মোহনীয় রূপে ধরা দিয়েছেন মেহজাবীন। আর আদনান আল রাজীবকে বাদামি রংয়ের শেরওয়ানিতে এদিন পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান সুপুরুষ হিসেবে সবার সম্মুখে উপস্থিত হয়েছিলেন, যিনি তার দীর্ঘদিনের প্রেয়সীকে এদিন একান্ত আপনজন সহধর্মিণী হিসেবে জীবনে পেয়েছেন।
এর আগে, ২৩ ফেব্রুয়ারি বেশ ধুমধাম করে একই ভেন্যুতে গায়ে হলুদের আনুষ্ঠানিকতা সেরেছিলেন মেহজাবীন ও রাজীব। সকালে শুরু হয়ে তাদের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান চলেছে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এদিন মেহজাবীনের পরনে ছিল বেগুনি রঙের লেহেঙ্গা আর রাজীব পরেছিলেন কালো রঙের কাবলি পাঞ্জাবি ও পায়জামা।
রাজীব-মেহজাবীনের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে কঠোর গোপনীয়তা নিশ্চিত করা হয়। অতিথিদের অনুরোধ করা হয় , মেহজাবীন নিজেই তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আক্দ, গায়ে হলুদ এবং বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি পোস্ট করবেন। এরপর যেন অতিথিরা তাদের ছবি পোস্ট করেন। অতিথিরা নবদম্পতির এই আবদার মেনে নিয়েছেন সাদরে।
মেহজাবীন চৌধুরী ও আদনান আল রাজীবের প্রেমের শুরু ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল থেকে এবং এই সম্পর্ক পূর্ণতা পেল ২০২৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। ৯ এপ্রিল, ২০১২ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫— মোট ৪৬৯৪ দিনের এই ভালোবাসার পথ পরিক্রমা শেষে জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করলেন এই তারকা দম্পতি।তাদের জীবনের নতুন এই অধ্যায়ও ভালোবাসায় পরিপূর্ণ থাকবে সেটাই এই জুটির ভক্ত-অনুরাগীদের কামনা।
স্টাফ রিপোর্টার
সর্বাধিক পঠিত
Loading...