দেশীয় চলচ্চিত্রে "মেঘমল্লার" খ্যাত নির্মাতা জাহিদুর রহিম অঞ্জনকে বৃহস্পতিবার দুপুরে মায়ের কবরে দাফন করা হবে।
চলচ্চিত্র নির্মাতা চলচ্চিত্র আন্দোলন কর্মী ও শিক্ষক অঞ্জনকে দাফনের আগে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় জাদুঘরের সামনে রাখা হবে।
বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের সাবেক এই সভাপতিকে সর্বস্তরের জনগণের শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ২৭ ফেব্রুয়ারি ( বৃহস্পতিবার) শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে রাখা হবে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরাম। বুধবার সন্ধ্যায় পাঠানো ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টা ৩০ মিনিট থেকে ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য চলচ্চিত্র নির্মাতা অঞ্জনের মরদেহ জাতীয় জাদুঘরের সামনে রাখা হবে। এরপর আজিমপুর কবরস্থানে মায়ের কবরে তাকে দাফন করা হবে।
‘মেঘমল্লার’ সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালক’ ও ‘শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা’ হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন জাহিদুর রহিম অঞ্জন। গত সোমবার রাত সাড়ে আটটায় ভারতের বেঙ্গালুরুতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী এই পরিচালক । মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬১ বছর।
বহুদিন ধরেই লিভারের জটিলতায় ভুগছিলেন অঞ্জন। এবং বিগত কয়েক মাস ধরে বেঙ্গালুরুর স্পর্শ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। গত সপ্তাহেই তার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা এবং অস্ত্রোপচারের পরেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। শেষপর্যন্ত লাইফ সাপোর্টে থাকাকালীন সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এই গুণী নির্মাতা।
কোলাজ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার বিজয়ী নির্মাতা জাহিদুর রহিম অঞ্জনের মরদেহ গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় দেশে এসে পৌঁছায় এবং সেখান থেকে বোন তন্নির বাসা ইস্কাটনে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে স্থানীয় মসজিদে গোসল শেষে প্রথম জানাজা হয় এবং জানাজায় আত্মীয়-পরিজন ছাড়াও নির্মাতা আকরাম খান, সুরকার ও গীতিকার প্রিন্স মাহমুদসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। জানাজা শেষে তার মরদেহ লাশবাহী বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সে রাখা হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে অঞ্জনের মরদেহ তার কর্মস্থল স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শ্রদ্ধা জানানোর পর দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।এখানে বাদ যোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে তৃতীয় জানাজা শেষে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে এবং শ্রদ্ধা নিবেদনের পরে আজিমপুর কবরস্থানে মায়ের কবরে শেষ শয্যায় শায়িত হবেন প্রয়াত এই গুণী নির্মাতা।
আরও পড়ুনঃ- বক্স অফিসে মুক্তির তেরতম দিনেও 'ছাভা'র ধামাকা অব্যাহত
কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘রেইনকোট’ গল্প অবলম্বনে পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘মেঘমল্লার’ নির্মাণ করেন অঞ্জন। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি ছিল তার প্রথম ফিচার ফিল্ম। প্রথম ছবির জন্যই তিনি ‘শ্রেষ্ঠ পরিচালক’ ও ‘শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা’ হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
১৯৬৪ সালের ২৭ নভেম্বর ফরিদপুরের রাজবাড়ীতে বরেণ্য এই নির্মাতার জন্ম।তিনি ভাষাসৈনিক মিজানুর রহিমের সন্তান। তিনি ১৯৮৭ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং ১৯৯০ সালে ভারতের পুনে ফিল্ম ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট থেকে ‘ডিরেকশন এন্ড স্ক্রিপ্ট রাইটিং’-এর উপর স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা অর্জন করেন। স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগে শিক্ষকতার পাশাপাশি বাংলাদেশ ও চলচ্চিত্র টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (বিসিটিআই), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে চলচ্চিত্র শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন গুণী এই চলচ্চিত্র নির্মাতা।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলন কর্মী, শর্টফিল্ম ফোরামের সাবেক সভাপতি ও চলচ্চিত্র শিক্ষকের মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক ও স্মৃতিচারণা করছেন চলচ্চিত্রের সহকর্মী থেকে অগণিত মানুষ।ভারতের পুনে ফিল্ম ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে তার অসংখ্য গুণী সহপাঠী ও বন্ধু এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বগণ নির্মাতা অঞ্জনের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ হয়ে করছেন। জাহিদুর রহিম অঞ্জন স্ত্রী কথাসাহিত্যিক শাহীন আখতার, দুই ভাই, এক বোন ও অসংখ্য বন্ধু-স্বজন রেখে গেছেন।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর মনসমীক্ষামূলক উপন্যাস অবলম্বনে সরকারি অনুদানে নির্মিত তার পরবর্তী পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘চাঁদের অমাবস্যা’ মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।শুটিং সম্পন্ন করে গত বছরেই সিনেমাটি মুক্তির পরিকল্পনা থাকলেও দেশের সার্বিক অবস্থা এবং নিজের অসুস্থতার কারণে মুক্তি দিতে পারেননি। তবে খুব শিগগির সিনেমাটি দর্শকদের সামনে নিয়ে আসতে আগ্রহী থাকলেও তার আগেই সবাইকে শোকবিহ্বল করে চিরবিদায় নিলেন তিনি।
ডেস্ক রিপোর্টার
সর্বাধিক পঠিত
Loading...