আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন নারী ও কন্যার উন্নয়ন’। দিবসটিকে ঘিরে দেশের নারী তারকারা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস এর পূর্বনাম ছিল আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস । কোথাও এই দিবস নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধা উদ্যাপনের মুখ্য বিষয় হলেও কোথাও মহিলাদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠাটি বেশি গুরুত্ব পায়।লিঙ্গবৈষম্য দূর করে নারীর প্রতি সম্মান ও সমানাধিকারের বার্তা জানাতেই ১৯৭৫ সাল থেকে প্রতিবছর মার্চ মাসের ৮ তারিখ বিশ্বজুড়ে উদ্যাপিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস।
এই দিবসটি উদ্যাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৯০৯ সালে ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথম এবং ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বৎসর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন এবং সিদ্ধান্ত হয় ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালন করা শুরু হয়।
নারী দিবস উপলক্ষে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন দেশের নারী তারকারা। নারীদের সম্মানে একটি বিশেষ দিন উৎসর্গ করা হয়েছে এবং এই দিনটিতে শুধুই নারীদেরকেই প্রাধান্য দেওয়া- এটাকে নারীদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি বলেই মনে করেন চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস। তিনি বলেন, আজ নারীদের অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে জানাই শুভেচ্ছা। আমি মনে করি, প্রতিদিন সকালটা শুরু হয় নারীদের হাত থেকে। ঘুম থেকে উঠেই সন্তান, সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। বর্তমানে নারীরা এখন অনেক বেশি এগিয়ে গেছেন।'
নায়িকা আরও বলেন, 'আমি যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখি আমার মেয়ে ভক্ত আমাকে বলে আপনি এগিয়ে যান। তখন এটা আমার জন্য অনেক বড় একটা প্রাপ্তি। আমার কাছে প্রত্যেকটা দিনই নারী দিবস।
সকালে উঠেই প্রত্যেকটা নারীর জীবনে যুদ্ধ শুরু হয়। আমার ক্ষেত্রেও তাই। আর এই এগিয়ে চলার পথটা একাই হাঁটতে হয় প্রত্যেকটা নারীকে। উৎসাহ বা সহযোগিতার হাত হয়তো অনেকেই স্বল্প সময়ের জন্য বাড়ায়। কিন্তু যুদ্ধটা তাকে একাই করতে হয়। নারীদের জন্য রইল শুভকামনা।'
ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী নারী দিবস সম্পর্কে তার নিজস্ব মতামত তুলে ধরতে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও শেয়ার করে লিখেছেন, ‘সমাজের চোখে সেরা হবার জন্য আমরা নারীরা প্রায়ই ভুলে যাই, আমরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো দিক দিয়ে আলাদা। আর তাই অন্যের কাছে সেরা হবার চেষ্টা না করে আমাদের উচিত নিজেদের স্বতন্ত্র সত্তা আবিষ্কার করা। এই সত্তাই আমাদের জীবনের দৌড়ে সামনের সারিতে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘নারীদের পাশে যারা আছেন, থাকবেন সেসব পুরুষ বন্ধুদের এবং অবশ্যই নারী বন্ধুদের আজকের এই দিনে জানাই বিশেষ শুভেচ্ছা।’
সমাজমধ্যমে নারী দিবস নিয়ে নিজস্ব মতামত তুলে ধরেছেন চিত্রনায়িকা শবনম বুবলী। তিনি মা, মেয়ে, স্ত্রী কিংবা বোন হিসেবে নারীদের সম্মান করার আহ্বান জানিয়েছেন ঢালিউডের এই অভিনেত্রী। ফেসবুকে শবনম বুবলী লেখেন, ‘একজন নারী মা, মেয়ে, স্ত্রী, বোন।তাই আসুন সবাই নারীদের সম্মান করি। বিশ্বের সকল নারীদের জানাই নারী দিবসের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।'
এদিকে, ছোট ও বড় পর্দার অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে নারী দিবসের স্ট্যাটাসে লিখেছেন, "যেই দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢুকলে প্রতি রিফ্রেশে একটি করে ধর্ষনের সংবাদ, সেই দেশে আবার ওমেনস ডে কি?"
আরও পড়ুনঃ- জে পপ গায়ক কেনশিন কামিমুরা যৌ*ন নি*পী*ড়নের দায়ে অভিযুক্ত
সঙ্গীতশিল্পী সোমনুর মনির কোনাল বিশেষ এই দিনটিতে বলেন, 'নারী দিবস নিয়ে কিছু বলতে আমার লজ্জা হচ্ছে। কী বলব? এই ছোট্ট একটা শিশু ধর্ষিত হলো নিজের বোনের বাড়িতে গিয়ে। একজন মানুষ হিসেবেও কিছু বলার মুখ আছে আমাদের? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আঙিনায় এক শিক্ষার্থীকে হেনস্তা কিংবা মাগুরায় নিজের বোনের বাড়িতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার আট বছরের শিশু; এসব ঘটনা সাধারণ মনে যেমন আতঙ্ক তৈরি করছে, তেমনি শঙ্কিত হচ্ছেন শোবিজের নারীরাও। তার ওপর গত কয়েক মাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন একাধিক অভিনেত্রী। পণ্ড করে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এসব নিয়ে অল্পবিস্তর প্রতিবাদও হয়েছে। তবে এসব ভেবে যখন ‘কেমন আছি’র জবাব দিতে হয়, তখন উত্তর আলাদাই হয়।'
অন্যদিকে, আরেক গায়িকা ফাতিমা তুয-যাহরা ঐশী এদিনে বলেন, ' আমি ভালো আছি। নারী হিসেবে বলব না, মানুষ হিসেবে ভালো আছি। সৃষ্টিকর্তা নারী-পুরুষ আলাদা করে বানিয়েছেন বটে, তবে আমরা বেঁচে থাকি তো মানুষ হিসেবে। আর কিছু ঘটনার কথা তো কানে আসছে। সেটা নিয়ে বলব, আমরা সবাই চাই সুন্দরভাবে নিজেদের কাজ করে যেতে। দেখুন, দেশ ভালো থাকে কখন? যখন প্রত্যেকে যার যার কাজ সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে করতে পারেন। সুতরাং যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে, সেগুলো আর না ঘটুক, এটাই প্রত্যাশা আমার।'
প্রসঙ্গত, নারীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিকসহ সব ধরনের অর্জন উদ্যাপনের একটি বৈশ্বিক দিন আন্তর্জাতিক নারী দিবস।কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের প্রতিবাদে এবং ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ে রাজপথে নেমেছিলেন নারী শ্রমিকেরা এবং এই শ্রম আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ পথপরিক্রমায় চালু হয় ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’। গত শতকের সত্তরের দশকের মাঝামাঝি দিবসটি জাতিসংঘের স্বীকৃতি লাভের মধ্য দিয়ে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ বিশ্বরূপ পায়।
ডেস্ক রিপোর্টার
সর্বাধিক পঠিত
Loading...