ম্যানচেস্টার সিটির মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরু থেকেই স্বাগতিকরা আধিপত্য বিস্তার করেছিল। আর্লিং হলান্ডের দুর্দান্ত দুটি গোলের সুবাদে ৮৫ মিনিট পর্যন্ত সিটি ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থেকেও, শেষ মুহুর্তের নাটকীয়তায় ৩-২ গোলের ব্যবধানে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে পরাজয় বরণ করে।
ম্যানচেস্টার সিটির ঘরের মাঠ ইতিহাদে দর্শকদের মধ্যে ছিলো বাড়তি উত্তেজনা। বিশাল এক টিফোতে ফুটে উঠেছিল রদ্রির ব্যালন ডি’অরের ছবি, যেখানে লেখা ছিল, "তোমাদের কান্না এবারে থামাও।" কিন্তু সেই ব্যানারটাই কি রিয়াল মাদ্রিদকে আরও বেশি উদ্দীপ্ত করেছিল? এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো অপ্রাসঙ্গিক, কারণ রিয়াল শুধু জয় নিয়েই মাঠ ছাড়েনি, বরং ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ম্যাচ শেষে দলের ব্যাজ দেখিয়ে যেন মনে করিয়ে দিলেন— লস ব্লাঙ্কোসদের ট্রফি ক্যাবিনেটে এখনো ১৫টি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা গর্বের সঙ্গে শোভা পাচ্ছে।
তবে ম্যাচটি যে নাটকীয়তার এক নতুন সংজ্ঞা তৈরি করেছে। শেষ বাঁশি বাজানোর মাত্র পাঁচ মিনিট আগে পর্যন্ত ম্যানসিটি ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে ছিল। কিন্তু অতিরিক্ত সময়সহ মাত্র ছয় মিনিটের ব্যবধানে রিয়াল মাদ্রিদ ইতিহাসের পাতায় আরেকটি অবিস্মরণীয় কামব্যাক লিখে দিলো। ভালোবাসার সপ্তাহে ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয় জয় করে নিলো কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যরা।
প্রথম থেকেই ম্যাচ ছিল ম্যানচেস্টার সিটির নিয়ন্ত্রণে। নিজেদের পরিচিত পজেশন-ভিত্তিক ফুটবলের প্রদর্শনীতে তারা রিয়ালকে চেপে ধরেছিল। এরই ধারাবাহিকতায়, ১৯ মিনিটের মাথায় সিটিজেনদের প্রথম গোল। বাঁ দিক থেকে জ্যাক গ্রিলিশের নিখুঁত ক্রস বুক দিয়ে আলতো টাচে এগিয়ে দেন ইউস্কো গাভার্দিওল। আর বল পেয়ে হালান্ড যা করার, সেটাই করলেন— বল জড়ালেন জালে।
গোল খাওয়ার পর যেন ঘুম ভাঙে রিয়ালের। ২৫ মিনিটেই সমতায় ফিরতে পারত তারা, কিন্তু দুর্ভাগ্য ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের— তার শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। এরপরই ম্যানসিটির জন্য বড় ধাক্কা হয়ে আসে গ্রিলিশের ইনজুরি। দারুণ খেলতে থাকা এই ইংলিশ উইঙ্গার মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন। বদলি হিসেবে নামা ফিল ফোডেনেরও গোল করার দারুণ সুযোগ ছিল, কিন্তু থিবো কর্তোয়ার দুর্দান্ত সেভে তা আটকে যায়।
আরও পড়ুনঃ- আতিফ আসলামের কন্ঠে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অফিশিয়াল থিম সং
প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে একেবারে সোনালি সুযোগ পেয়েছিলেন এমবাপে। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে বল উড়িয়ে মারেন তিনি। বিরতির পর ৫৪ মিনিটেও মিস করেন সহজ একটি সুযোগ। তবে ৬০ মিনিটে সেই হতাশার জবাব দেন দারুণ এক গোলে। ফেদে ভালভের্দের ফ্রি-কিক থেকে বল পান দানি সেবায়োস। তিনি বল উঁচু করে বাড়ান, সেখান থেকে এমবাপে শট নেন— যদিও পুরোপুরি সাইড ভলি হয়নি, তবে বল ঠিকই জড়িয়ে যায় সিটির জালে। রিয়াল মাদ্রিদ ফিরে আসে সমতায় (১-১)।
ম্যাচের ৮০ মিনিটে ম্যানসিটি আবার লিড নেয়। ফিল ফোডেনকে ডি-বক্সে ফাউল করলে রিয়ালের বিপক্ষে পেনাল্টি পায় সিটি। সেখান থেকে গোল করতে কোনো ভুল করেননি আর্লিং হালান্ড। ২-১ গোলে এগিয়ে যায় সিটি।
৮৪ মিনিটে আনচেলত্তি বড় কৌশল নেন— মাঠে নামান ব্রাহিম দিয়াজকে। আর মাঠে নামার দুই মিনিটের মধ্যেই দিয়াজ গোল করে ম্যাচে ফেরান রিয়ালকে। ডি-বক্সের জটলার ভেতর বল পেয়ে জোরালো শটে সিটির জাল কাঁপিয়ে দেন তিনি। তবে গোল করলেও সাবেক ক্লাবের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে উদযাপন করেননি।
সিটির দুর্দশা এখানেই শেষ হয়নি। যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে রিয়ালের হয়ে ম্যাচের শেষ গোলটি করেন জ্যুড বেলিংহাম। ভিনিসিয়ুস জুনিয়র বল নিয়ে দ্রুত দৌড় দেন, সিটির দুই ডিফেন্ডার রিকো লুইস ও রুবেন দিয়াজকে পরাস্ত করেন। গোলরক্ষক এদেরসনকে সামনে পেয়েও নিজে শট না নিয়ে বল বাড়ান বেলিংহামের উদ্দেশে। একেবারে ফাঁকা জালে বল পাঠিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন ইংলিশ মিডফিল্ডার।
৩-২ গোলের জয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোয় জায়গা পাওয়ার পথে গুরুত্বপূর্ণ এক ধাপ এগিয়ে গেল রিয়াল মাদ্রিদ। এখন তাদের লক্ষ্য ১৯ ফেব্রুয়ারি, সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর ফিরতি লেগ— যেখানে সিটি ঘুরে দাঁড়াতে চাইবে, আর রিয়াল চাইবে আরেকবার নিজেদের রাজত্ব প্রমাণ করতে!
ডেস্ক রিপোর্টার
সর্বাধিক পঠিত
Loading...