চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোতে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের পর এবার লা লিগায় ওসাসুনার বিপক্ষে মাঠে নামে রিয়াল মাদ্রিদ। তবে এবার গল্পটা একটু অন্যরকম ছিল। এবার কামব্যাকের স্বাদ তো পেলোই না রিয়াল, বরং স্বাগতিক ওসাসুনার লড়াকু পারফরম্যান্সে পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে বাধ্য হয় তারা।
ওসাসুনা এবার তাদের ‘ড্র স্পেশালিস্ট’ খ্যাতির প্রতি সুবিচার করল আরও একবার। চলতি মৌসুমে ২৩ ম্যাচের মধ্যে ১০টিতেই ড্র করেছিল দলটি, এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। যদিও শুরুটা দারুণ করেছিল রিয়াল। প্রথমার্ধে কিলিয়ান এমবাপে গোল করলেও দ্বিতীয়ার্ধে বুডিমিরের পেনাল্টি স্বাগতিকদের মূল্যবান এক পয়েন্ট এনে দেয়। শেষ দিকে রিয়ালের প্রবল আক্রমণ সামলেছে ওসাসুনার রক্ষণভাগ, তাদের আত্মবিশ্বাস ছিল দৃঢ়।
ওসাসুনার মাঠে খেলতে নেমে রিয়াল শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে। ম্যাচের ১৫তম মিনিটে ফেডে ভালভার্দের দুর্দান্ত এক পাস থেকে গোল করেন এমবাপে। এই ফরাসি তারকার ফিনিশিং ছিল দুর্দান্ত, তবে এর আগেও সুযোগ তৈরি হয়েছিল। মাত্র ৩ মিনিটেই হেড থেকে গোলের সুযোগ নষ্ট করেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। এরপর ৯ মিনিটে এমবাপের এক শট দুর্দান্তভাবে ঠেকিয়ে দেন ওসাসুনার গোলরক্ষক হেরেরা।
ওসাসুনাও চেষ্টা করছিল প্রতি-আক্রমণে যাওয়ার, কিন্তু তাদের প্রথম ভালো সুযোগ আসে ৩০ মিনিটে। তবে রিয়ালের গোলবারে ছিলেন থিবো কর্তোয়া, যিনি অসাধারণ এক সেভ করেন। ম্যাচের সবচেয়ে বড় নাটকীয় মুহূর্ত আসে ৩৮ মিনিটে, যখন রিয়ালের ইংলিশ মিডফিল্ডার জ্যুড বেলিংহাম রেফারির সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। তার মন্তব্যকে আপত্তিকর মনে করে সরাসরি লাল কার্ড দেখিয়ে দেন রেফারি হোসে মুনুয়েরাই। এরপর রিয়ালকে প্রায় এক ঘণ্টা ১০ জন নিয়ে খেলতে হয়, যা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
এই ম্যাচের ফলাফলে রেফারির ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক হওয়াটা স্বাভাবিক। বেলিংহামের লাল কার্ড রিয়ালের পরিকল্পনাই ওলট-পালট করে দেয়। প্রথমার্ধের বাকি সময়টুকুতে ম্যাচ ছিল ছন্দহীন, রিয়াল রক্ষণাত্মক হয়ে পড়ে, ওসাসুনাও গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে।
দ্বিতীয়ার্ধে ৫৫ মিনিটে আসে ম্যাচের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। ওসাসুনার স্ট্রাইকার বুডিমিরকে রিয়ালের মিডফিল্ডার কামাভিঙ্গা ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। স্পটকিক থেকে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান বুডিমির। এরপর থেকেই রিয়াল ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে, কিন্তু ওসাসুনার রক্ষণভাগ ছিল অনড়।
আরও পড়ুনঃ- শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে জয়বঞ্চিত লিওনেল মেসির দল ইন্টার মায়ামি
শেষ দিকে রিয়াল মাদ্রিদ আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। যোগ করা সময়ে এমবাপে আরও একবার গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু ওসাসুনার গোলরক্ষক হেরেরা আবারও তাকে হতাশ করেন। এমবাপে, ভিনিসিয়াস, রদ্রিগো—তিনজনই গোলের জন্য চেষ্টা করলেও ওসাসুনার রক্ষণ তাদের আটকে দেয়।
এই ড্রয়ের ফলে ২৪ ম্যাচ শেষে রিয়াল মাদ্রিদের পয়েন্ট হলো ৫১, যদিও সেল্টা ভিগোর বিপক্ষে জয় পেলেই অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ তাদের টপকে যাবে। অ্যাতলেটিকোর পয়েন্ট ৪৯, আর বার্সেলোনার ২৩ ম্যাচে সংগ্রহ ৪৮ পয়েন্ট। অন্যদিকে, ওসাসুনা তাদের ১১তম ড্রয়ের মাধ্যমে ৩২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ৭ম স্থানে অবস্থান করছে।
এই ম্যাচে রিয়ালের পারফরম্যান্স অনেক কিছুই ইঙ্গিত দিচ্ছে। তাদের আক্রমণাত্মক শক্তি যথেষ্ট ভালো হলেও ১০ জন নিয়ে খেলতে হলে রক্ষণে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ওসাসুনার মতো মাঝারি সারির দল তাদের আটকে দিতে পারলে বড় ম্যাচগুলোতে আরও সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে, চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বে এমন ভুল করলে প্রতিপক্ষ সহজে ছেড়ে দেবে না।
এই ড্র নিঃসন্দেহে রিয়াল মাদ্রিদের জন্য একটি ধাক্কা, তবে মৌসুমের শেষভাগের আগে এটি তাদের জন্য এক ধরনের বাস্তবতার পরীক্ষা। এখন দেখার বিষয়, তারা সামনের ম্যাচগুলোতে কীভাবে ঘুরে দাঁড়ায়।
ডেস্ক রিপোর্টার
সর্বাধিক পঠিত
Loading...