কয়েকদিন আগেই ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে শিরোপা হাতছাড়া করেছিল পাকিস্তান। এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেই হারের বদলা নেওয়ার দারুণ সুযোগ ছিল তাদের সামনে। কিন্তু ঘরের মাঠেও ব্যর্থ হল মোহাম্মদ রিজওয়ানের নেতৃত্বাধীন দল।
করাচির জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী ম্যাচে ৬০ রানের বড় ব্যবধানে হেরে গেল পাকিস্তান, বিপরীতে দারুণ আত্মবিশ্বাসী জয় তুলে নিয়ে সেমিফাইনালের সমীকরণ অনেকটাই সহজ করে ফেলল কিউইরা।
প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩২০ রানের পাহাড় গড়ে নিউজিল্যান্ড। রান তাড়া করতে নেমে পাকিস্তান ৪৭.২ ওভারে ২৬০ রানে অলআউট হয়ে যায়। শুরু থেকেই চাপে পড়ে স্বাগতিকরা, আর সেই ধাক্কা সামলাতে পারেনি পুরো ইনিংসে।
বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে পাকিস্তানের শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি। উদ্বোধনী জুটির অবদান মাত্র ৮ রান। সৌধ শাকিল ৬ রান করেই বিদায় নিলে চাপ আরও বেড়ে যায়। তিন নম্বরে নামা অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ানও ব্যর্থ, মাত্র ৩ রান করে ফিরেছেন তিনি। ২২ রানের মধ্যে দুই উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে পাকিস্তান।
সেখান থেকে দলকে টেনে তুলতে চেষ্টা করেন বাবর আজম ও ফখর জামান। কিন্তু বেশি দূর এগোতে পারেননি ফখর, ২৪ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। এরপর বাবরের সঙ্গে ভালোই খেলছিলেন সালমান আলি আগা। দ্রুত রান তুলছিলেন তিনি, কিন্তু ২৮ বলে ৪২ রান করে ফিরে গেলে ম্যাচ পাকিস্তানের হাতছাড়া হয়ে যেতে থাকে। মিডল অর্ডারে ব্যর্থ হন তৈয়ব তাহিরও, মাত্র ১ রান করে ফেরেন তিনি।
কিছুটা দেখেশুনে খেলা বাবর আজম হাফ-সেঞ্চুরি করেন বটে, কিন্তু তার ৯০ বলে ৬৪ রানের ইনিংস দলকে জয়ের পথে নিয়ে যেতে পারেনি। তার বিদায়ের পর কার্যত পাকিস্তান ম্যাচ থেকে ছিটকে যায়। তবে শেষদিকে খুশদিল শাহ কিছুটা লড়াই করার চেষ্টা করেন। ৪৯ বলে ৬৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেললেও তা কেবল পরাজয়ের ব্যবধান কমানোর জন্য যথেষ্ট ছিল।
নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের শুরুটা ছিল বেশ সতর্ক। পাকিস্তানি বোলারদের দারুণ স্পেল সামলে এগোচ্ছিলেন কিউই ব্যাটাররা। তবে দলীয় ৩৯ রানের মাথায় প্রথম ধাক্কাটা দেন লেগস্পিনার আবরার আহমেদ। মাত্র ১০ রান করা ডেভন কনওয়েকে বোল্ড করে দেন তিনি। এক রান যোগ হতেই নাসিম শাহর শিকার হয়ে ফেরেন অভিজ্ঞ কেইন উইলিয়ামসন, তিনিও করেন মাত্র ১ রান।
ড্যারিল মিচেলও তেমন কিছু করতে পারেননি, ২৪ বলে ১০ রান করেই হারিস রউফের বলে ফিরতে হয় তাকে। ৭৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে নিউজিল্যান্ড। তবে এখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ায় কিউইরা।
আরও পড়ুনঃ- বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচের আগে ভারতীয় ড্রেসিংরুমে উত্তেজনা!
তৃতীয় উইকেটে উইল ইয়াং ও টম ল্যাথামের ১১৮ রানের জুটিই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ইয়াং সাবলীল ব্যাটিং করে তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি, যা দেশের বাইরে তার প্রথম শতক। শেষপর্যন্ত ১০৭ রান করে নাসিম শাহর দ্বিতীয় শিকার হন তিনি। কিন্তু এখানেই থামেনি নিউজিল্যান্ড। ইনিংসের শেষভাগে রানের গতি আরও বাড়িয়ে দেন গ্লেন ফিলিপস ও ল্যাথাম। দুজনে মিলে ১২৪ রানের ঝড়ো জুটি গড়েন, যার বড় অংশই আসে দ্রুতগতির রান তোলার মাধ্যমে।
শেষ ১০ ওভারে পাকিস্তানের বোলারদের ওপর চড়াও হয় কিউই ব্যাটাররা। বিশেষ করে গ্লেন ফিলিপস ছিলেন বিধ্বংসী মেজাজে। শাহিন শাহ আফ্রিদিকে একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে রান বাড়িয়ে নেন তিনি। ওয়ানডে ফরম্যাটে এখন পর্যন্ত শাহিনের বিপক্ষে ২৯ বলে ৭৮ রান করে ফেলেছেন ফিলিপস, যা পাকিস্তানের জন্য ছিল দুশ্চিন্তার বিষয়।
তবে নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে স্বস্তির জায়গা ছিল ল্যাথামের ব্যাটিং ফর্মে ফেরা। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাটিং পজিশন বদলে যাওয়ায় কিছুটা ধুঁকছিলেন তিনি, কিন্তু এই ম্যাচে দারুণ সেঞ্চুরি করে নিজের আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন। তার ব্যাট থেকে আসে ১১৮ রানের অনবদ্য ইনিংস। অপরপ্রান্তে ৬১ রানে অপরাজিত ছিলেন ফিলিপস।
পাকিস্তানের হয়ে নাসিম শাহ ও হারিস রউফ সর্বোচ্চ ২টি করে উইকেট নেন। তবে দলের বাকি বোলাররা একেবারেই ছন্দ খুঁজে পাননি। ব্যাটিং বিপর্যয় আর বাজে বোলিংয়ের কারণেই নিজেদের মাটিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শুরুতেই বড় হার দেখতে হলো পাকিস্তানকে। অন্যদিকে দারুণ জয় তুলে নিয়ে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে নিউজিল্যান্ড, যারা ইতোমধ্যে সেমিফাইনালের পথ অনেকটাই সহজ করে ফেলেছে।
ডেস্ক রিপোর্টার
সর্বাধিক পঠিত
Loading...