নাসার প্রধান নভোচারী জোসেফ এম আকাবা বলেছেন, বাংলাদেশের তরুণরা যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন করতে পারে, তাহলে তাদের জন্য নাসার মতো প্রতিষ্ঠানে কাজের দারুণ সম্ভাবনা তৈরি হবে।
তিনি জানিয়েছেন, এআই প্রযুক্তি উন্নত করার জন্য নাসা নিয়মিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে, যেখানে বাংলাদেশও অংশ নেয়। যারা এআই প্রযুক্তি নিয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করবে, তাদের নাসার মতো প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ পেতে আর কোনো বাধা থাকবে না।
রোববার সকালে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্লে পেন স্কুলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জোসেফ এম আকাবা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশে তার প্রথম সফরে তিনি বৈশ্বিক প্রযুক্তি উন্নয়নে নাসার অবদান, মহাকাশ গবেষণায় বাংলাদেশের সম্ভাবনা এবং কীভাবে তরুণ প্রজন্ম এগিয়ে যেতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করেন। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি মহাকাশ গবেষণার ভবিষ্যৎ এবং এআই প্রযুক্তির ভূমিকা নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
আলোচনায় জোসেফ বলেন, মহাকাশ গবেষণায় এখন এআই প্রযুক্তির গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। এটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা থেকে শুরু করে ত্রুটি চিহ্নিত করা এবং সিদ্ধান্ত নিতে প্রতিটি ক্ষেত্রে সহায়তা করে। ভবিষ্যতে নাসার লক্ষ্য হলো আরও বেশি জায়গায় এআই ব্যবহার করা। তবে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সৃজনশীল কাজের জন্য মানুষের ভূমিকা অপরিহার্য থাকবে। তিনি বলেন, "বাংলাদেশের তরুণরা যদি এআই প্রযুক্তি ভালোভাবে শিখতে পারে, তাহলে তারা নাসা কিংবা বিশ্বের অন্য যেকোনো বড় মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় কাজ করার সুযোগ পাবে।"

মহাকাশ অনুসন্ধানের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এখনও মানুষ চাঁদের বাইরে খুব দূর যেতে পারেনি। তবে নাসা এবং বিশ্বের অন্যান্য সংস্থা মঙ্গল গ্রহসহ আরও দূরের গন্তব্যে পৌঁছানোর পরিকল্পনা করছে। আগে মহাকাশ গবেষণায় শুধু সরকার যুক্ত ছিল, কিন্তু এখন বেসরকারি সংস্থাগুলো এবং সাধারণ মানুষও এতে অংশ নিচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, একদিন বাংলাদেশ থেকেও কেউ মহাকাশ ভ্রমণে যাবে। এজন্য প্রয়োজন হবে কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং মানসম্পন্ন শিক্ষা।”
মহাকাশে ছয় মাস থাকার স্মৃতি শেয়ার করে তিনি বলেন, “আমার রকেট থেকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছাতে আট মিনিট সময় লেগেছিল। সেখানে থাকাকালীন আমরা উদ্ভিদ ও মানুষের রক্তের ওপর গবেষণা করেছিলাম। এসব নমুনা পৃথিবীতে ফেরত পাঠানো হয়, যাতে আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। তবে মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফিরে আসার পর প্রথম কয়েক সপ্তাহ বেশ অস্বাভাবিক লাগে। মাধ্যাকর্ষণহীন পরিবেশ থেকে ফেরার পর সবকিছু ভারী মনে হয়। এজন্য ৪৫ দিন পুনর্বাসনে থাকতে হয় এবং নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ করাতে হয়। তবে মহাকাশে নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করলে এই সমস্যা অনেকটাই এড়ানো যায়।”
মহাকাশ অভিযানের সময় সবচেয়ে ভয়ানক অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে আকাবা বলেন, “মহাকাশে আগুন লাগার ঘটনা অত্যন্ত বিপজ্জনক। পৃথিবীতে আগুন লাগলে আমরা নিরাপদে বাইরে চলে যেতে পারি, কিন্তু মহাকাশে সেটা সম্ভব নয়। এছাড়া, ছোট উল্কাপিণ্ডের আঘাত এবং অ্যামোনিয়া লিকের মতো ঘটনা মহাকাশ যাত্রাকে আরও চ্যালেঞ্জিং করে তোলে। এসব ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণ নেওয়া হয় এবং মিশন কন্ট্রোল টিমের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়।”
আরও পড়ুনঃ- সার্ভার সমস্যায় ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও ম্যাসেঞ্জার অচল
মহাকাশে থাকার রোমাঞ্চকর দিনগুলো মনে করে তিনি বলেন, “মহাকাশে থাকা অভিজ্ঞতা আমি প্রতিদিন মিস করি। তবে পরিবারের সঙ্গে পৃথিবীতে থাকার আনন্দও অনেক। মহাকাশে একটি মজার বিষয় হলো, সেখান থেকে পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় ফোন করা যায়, অথচ কেউ আমাকে ফোন করতে পারে না। এসব অভিজ্ঞতা সবসময় আমাকে অনুপ্রাণিত করে।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্লে পেন স্কুলের চেয়ারম্যান এ মান্নান খাঁন, প্রিন্সিপাল শরাবন তহুরা, এবং ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পলিটিক্যাল অফিসার জেমস গার্ডিনার।
উল্লেখ্য, জোসেফ এম আকাবা শুধু নাসার একজন প্রধান নভোচারীই নন, তিনি একজন শিক্ষক, হাইড্রোজিওলজিস্ট এবং পিস কর্পসের সাবেক স্বেচ্ছাসেবক। ২০০৪ সালে তিনি নাসার নভোচারী প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হন এবং ২০২৩ সালে নাসার নভোচারী কার্যালয়ের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
ডেস্ক রিপোর্টার
সর্বাধিক পঠিত
Loading...